AREFIN RUMI
NEW SINGAR IN BANGLADESH
হাবিব, বালাম, ফুয়াদ আর হূদয় খান। তাঁদের পাশাপাশি এখন শ্রোতাদের কাছে আরেকটি নাম খুব পরিচিত—আরফিন রুমী। হ্যাঁ, অল্প দিনেই তাঁর গাওয়া ও সুর করা বেশ কটি গান দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই গানগুলো শোনা যাচ্ছে এফএম রেডিওর বিভিন্ন চ্যানেলে। ২০০৮ সালে এসেছে রুমীর একক অ্যালবাম। নিজের নামেই ছিল অ্যালবামটি—আরফিন রুমী। শুরুতেই তুমুল জনপ্রিয়তা না পেলেও তাঁর গানগুলো শ্রোতাদের পছন্দ হয়। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁর ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়। পরের বছর এসো না অ্যালবামটি তাঁকে তুলে নিয়ে আসে অনেক ওপরে। গান শুনে এফএম প্রজন্মের শ্রোতারা মুগ্ধ হয়। আর পেছন ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই, এবার শুধু এগিয়ে যাওয়ার পালা। গান গাওয়ার পাশাপাশি সুর দেওয়ার কাজটিও করছেন রুমী। গত রমজানের ঈদে রুমীর সুর করা গান নিয়ে এসেছে পাঁচটি অ্যালবাম। কোনোটিতে তিনি নিজেও গান করেছেন। এর মধ্য থেকে ছয়টি গান পেয়েছে দারুণ জনপ্রিয়তা। জনপ্রিয় সেই গানগুলোর কথাই বলব এবার। না বলা ভালোবাসা অ্যালবামে গান করেছেন নয়জন শিল্পী। এখানে আর্নিকের সঙ্গে রুমীর ‘না বলা ভালোবাসা’ ও কাজী শুভর গাওয়া ‘রাধা’ গান দুটি জনপ্রিয় হয়েছে। পড়শী অ্যালবামে পড়শীর সঙ্গে রুমী গেয়েছেন ‘তোমার পরশে’ গানটি। পাশাপাশি সবাই খুব বেশি শুনছে পড়শীর নিজের গাওয়া ‘মেঘলা দুপুর’। শফিক তুহিনের প্রথম অ্যালবাম স্বপ্ন এবং তুমিতে রুমীর সুর করা ‘এর বেশি ভালোবাসা যায় না’ এ সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় একটি গান। এরপর এবার শফিক তুহিন ডটকম অ্যালবামে রন্টির সঙ্গে শফিক তুহিন গেয়েছেন রুমীর সুরে ‘সূর্য মুচকি হাসে’ আর শফিক একা গেয়েছেন ‘নতুন করে জন্ম নেব তোমার ভালোবাসায়’ গান। চলচ্চিত্রের গানও সুর করছেন রুমী। ঈদে এসেছিল কমন জেন্ডার ছবির অডিও অ্যালবাম। এখানে ‘বাজারে ঢোল তোরা’ গানটি দারুণ প্রশংসিত হয়। মাত্র কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় এতগুলো অ্যালবামে সুর করার কাজটি কীভাবে সম্ভব হলো? ‘সব কটি অ্যালবামের কাজ করতে কিন্তু সময় লেগেছে প্রায় এক বছর। তবে এগুলো বেরিয়েছে একসঙ্গে।’ বললেন রুমী। রুমীর কাছ থেকে খুব শুনতে ইচ্ছে করছিল তাঁর সংগীতশিল্পী হয়ে ওঠার গল্পটা। ধানমন্ডির ২৭ নম্বর সড়কের পাশের এক বাসার নিচতলায় নতুন কিছু করার চেষ্টা করছেন রুমী ও তাঁর ‘দূরবীন’ ব্যান্ড। এখানে আছে নিয়মিত চর্চার জন্য প্র্যাকটিস প্যাড, স্টুডিও এবং অনলাইন রেডিও। চলছে এসব নিয়ে কাজ। নিজের গানের ফাঁকে তা দেখাশোনা করছেন রুমী। শনিবার সন্ধ্যায় এখানেই কথা হলো রুমীর সঙ্গে। মা গানের চর্চা করতেন। বাবা ছিলেন ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা। বাসায় একটা হারমোনিয়াম ছিল। ছোটবেলায় মা-বাবার সঙ্গে গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে যেতেন। সেখানে বিভিন্ন মাহফিলে আধ্যাত্মিক গান শুনতেন। নিজে কখনো সেভাবে চর্চা না করলেও সুফি গানের প্রতি তাঁর একটা আকর্ষণ আছে। ঢাকা গভর্নমেন্ট মুসলিম হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেন তিনি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ফিন্যান্স বিভাগে। নিজেদের পারিবারিক একটা ব্যবসা ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি সেখানেও বসতে হতো। কিন্তু ওই সময়ে ক্রিকেট খেলা নিয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিভিন্ন দলের হয়ে তখন প্রিমিয়ার লিগে খেলতেন। ব্যাট-বল দুটিতেই বেশ ভালো করেছেন। হঠাৎই খেলা ছেড়ে দিয়ে গান করার সিদ্ধান্ত নেন। সময়টা ২০০৫ সাল। পর পর দুবার ‘ক্লোজআপ ওয়ান: তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। কিন্তু প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়েন। এরপর আর ওপথে পা বাড়াননি। প্রথমবার হতাশ হলেও পরে নিজের মধ্যে জেদ তৈরি হয়। গানের চর্চা শুরু করেন। এ সময় পরিচয় হয় ফেরদৌস ওয়াহিদের সঙ্গে। তিনি নিজেদের এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে গান করার জন্য আমন্ত্রণ জানান রুমীকে। ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন হাবিবও। রুমীর গান শুনে প্রশংসা করেন হাবিব। কিছুদিনের মধ্যেই হাবিবের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যান। হাবিবের সুর ও সংগীত করা পর পর বেশ কটি জিঙ্গেল করেন রুমী। সব কটিই জনপ্রিয় হয়। এ সময় হাবিবের মাধ্যমে ফুয়াদের সঙ্গেও পরিচয় হয় রুমীর। এই দুজন কম্পোজারের সঙ্গে পরিচয় এবং যোগাযোগটা নিজের জীবনে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করেন রুমী। তাঁদের খুব কাছে থেকে নানা কিছু শেখার চেষ্টা করেন। তাঁদের সুরে গান গাওয়ার পাশাপাশি নিজেও কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নেন। তৈরি করেন নতুন নতুন গান। আর পরে সেই গানগুলোর প্রশংসা শোনেন হাবিব আর ফুয়াদের কাছ থেকে। রুমীর গানে হাবিব ও ফুয়াদের যথেষ্ট প্রভাব বোঝা যায়। হঠাৎ করে শুনলে মনে হবে, হাবিব কিংবা ফুয়াদই গাইছেন। রুমী বললেন, ‘যেহেতু অনেকটা সময় তাঁদের খুব কাছাকাছি থাকার সুযোগ পেয়েছি, তাই ওই রকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে আমি খুব সচেতনভাবে তা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি। তা আমার গান শুনলেই বোঝা যাবে।’ হ্যাঁ, রুমী এখন নিজের একটা ধারা তৈরি করেছেন। আর তা যেন শ্রোতাদের কাছে অনেক দিন টিকে থাকে, এর জন্য নিয়মিত সাধনা করছেন, চর্চা করছেন, নিজের গান ও সুর নিয়ে নিরীক্ষা করছেন। সময়, সুযোগ পেলেই গান শোনেন—নানা দেশের বিভিন্ন শিল্পীর গান। নিজের জন্য, ‘দূরবীন’ এবং অন্য শিল্পীদের গান তৈরি নিয়ে দারুণ ব্যস্ত রুমী। দিনের বেশির ভাগ সময় স্টুডিওতেই থাকেন। রুমী এখন চলচ্চিত্র ও নাটকে অভিনয় করছেন। হিমেল আশরাফের ছবির নাম ধানমন্ডি সড়ক নাম্বার ৮, আর নাটকটি হলো শহীদুজ্জামান সেলিমের। আবার অভিনয় কেন? রুমী বললেন, ‘গানের কাজ করতে করতে মাঝেমধ্যে হাঁপিয়ে উঠি। তখন অন্য কিছু করে নিজেকে আবার গানের জন্য তৈরি করি।’ মাত্র কয়েক দিন আগে বাবা হয়েছেন রুমী। ছেলের নাম আরিয়ান। জানালেন, এখন গানের ফাঁকে সময় পেলেই ছুটে যান ছেলের কাছে। তাকে দেখলে সব ক্লান্তি হারিয়ে যায়।
No comments:
Post a Comment